বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:১৭ অপরাহ্ন
Headline
নড়াইল দিশারী শোলপুর সেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন নড়াইলে দিনমজুরকে ঘরের ভিতর আটকে রেখে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনিচ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে নড়াইলের কৃষি কর্মকর্তাকে ডিমোশন দিয়ে বদলি নড়াইল সদর উপজেলায় গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নারীসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক নির্যাতনে সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছরের জেল ফেব্রুয়ারিতে ভোট আয়োজনে ইসিকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের চিঠি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল দেশ ও মানুষের কল্যাণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল দেশ ও মানুষের কল্যাণে জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠন (জিসাস) কালিয়া পৌর শাখার কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত নড়াইলে স্বেচ্ছাসেবকদলের নেতা চুন্নু ফকিরকে কুপিয়ে জখম
নোটিশ
Wellcome to our website...
মৃত্যুর আগে ‘আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান’
/ ৭৬ Time View
Update : শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫, ৬:৫৭ অপরাহ্ন

ক্ষণিকের মধ্যেই কর্মচঞ্চল এক যুবককে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখলেন স্থানীয়রা। কোনো রকমে মুখ থেকে শুধু একটা বাক্যই উচ্চারিত হচ্ছিল, ‘আমাকে একটু হাসপাতালে নিয়ে যান।’ তার ডাকে সাড়া মিলল, কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পথেই নিভে গেল জীবন প্রদীপ। এমন একটি মৃত্য পরিচিত-অপরিচিত সবার হৃদয়ে দাগ কেটে গেল। সামান্য টাকার জন্য অকালে ঝরে গেল একটা তরতাজা প্রাণ।

যাত্রাবাড়ীর কাজলার ছনটেক এলাকায় রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বঁটির কোপে মো. ইয়াসিন গাজী নামের এক ব্যবসায়ী নিহত হন। খালাতো বোনের স্বামী আল আমিনের কাছে পাওনা টাকা চাইতে মায়ের দোয়া হোটেলে গিয়েছিলেন ইয়াসিন। সেখানে তাকে কোপায় আল আমিন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি।

ইয়াসিনের বাড়ি চাঁদপুর জেলার সদর থানার বাগাদি ঢালীরঘাট এলাকায়। তিনি ওই গ্রামের আবুল বাশার গাজীর ছেলে। তার ছোট দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে সাদ্দাম মার্কেট এলাকায় থাকতেন।

জানা যায়, মায়ের দোয়া হোটেলের মালিক ছিলেন ইয়াসিন গাজী। চার মাস আগে তিনি আল আমিনের কাছে হোটেলটি ২ লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। এরপর ইয়াসিন সাদ্দাম মার্কেটে আইসক্রিম কারখানা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। আল আমিন তাকে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেন। ১০ হাজার টাকা পাওনা ছিল। কয়েক দফা টাকার জন্য তাগাদা দেন ইয়াসিন। তাতেও টাকা পরিশোধ করেননি আল আমিন।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, রাত ১০টার একটু আগে ইয়াসিন কাজলা আসেন পাওনা টাকা আদায়ে। আশপাশের পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলেন, কুশল বিনিময় করেন। হোটেলের পাশেই নিচতলায় আল আমিন তার স্ত্রী ও হোটেলের কর্মচারীদের নিয়ে ভাড়া থাকেন। ইয়াসিন তাদের রুমে যান। পাওনা টাকা চাওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে কিছুটা বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে আল আমিন তাকে ধারালো বঁটি দিয়ে কোপ মারেন। সেই কোপ লাগে তার ঘাড়ে। রক্তে ভেসে যায় রুমের বিছানার চাদর, মেঝে। কাটা জায়গা চেপে ধরে রুম থেকে বেরিয়ে আসেন ইয়াসিন। সবার কাছে চিৎকার করে আকুতি জানান তাকে হাসপাতালে নেওয়ার। আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। পরে সেখানে (রাস্তায়) পড়ে যান ইয়াসিন। কয়েকজন তাকে রিকশায় করে পাশেই একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে এ ঘটনার পরই স্থানীয়রা আল আমিনকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন। রাত ১২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আল আমিনকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আল আমিনের স্ত্রীসহ কয়েকজনকে থানায় নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় ইয়াসিনের স্ত্রী শারমিন আক্তার সোমবার যাত্রাবাড়ী থানায় আল আমিন, তার স্ত্রী নাজমা বেগম, তাদের দুই স্বজন হারুন ও হারুনের স্ত্রী সাবিনা আক্তারকে আসামি করে মামলা করেন। এরপর আল আমিন, নাজমা ও সাবিনাকে মামলায় গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। হারুন পলাতক রয়েছে।

সোমবার দুপুরে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ তিনজনকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আসামিদের পক্ষে তাদের আইনজীবী এসএম জাকির হোসেন রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহ প্রত্যেকের দুদিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন।

এদিকে আল আমিন আদালতে তার আইনজীবীকে জানিয়েছেন, ইয়াসিন তাকে থাপ্পড় মারে। এতে তার রাগ ওঠে যায়। হাতের কাছে বঁটি ছিল। তাকে কোপ দেয়।

ইয়াসিনের স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন, ‘পাওনা ১০ হাজার টাকা চাওয়ায় ওরা আমার স্বামীকে খুন করেছে। আমার ছেলে দুটিকে বাবা হারা করেছে। আমি ওদের সর্বোচ্চ সাজা চাই, তার ফাঁসি চাই।’

ইয়াসিনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ঘটনাস্থলের পাশের দোকানি রফিক ভ্যারাইটিজ স্টোরের মো. রফিক জানান, হঠাৎ চিৎকার শুনি। দৌড়ে কাছে যাই। এ সময় ইয়াসিন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে অনুরোধ করেন। পরে তাকে রিকশায় করে পাশেই ইউনিক হাসপাতালে নিয়ে যাই। অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাই। রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল। এক পর্যায় দেখি নিঃশ্বাস নিচ্ছে না। হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা জানান, তিনি মারা গেছেন।

আফসোস করে বলেন, ‘যে লোকটার সঙ্গে কিছুক্ষণ আগে কথা হলো, কুশল বিনিময় হলো সেই লোকটা হাতের ওপর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো।’

ওই এলাকার মীর স্টোরের মালিক মীর সোহেল জানান, ইয়াসিন রাস্তার ওপর এসে চিৎকার করে বলে আমাকে একটু হাসপাতালে নিয়ে যান। এরপরই রাস্তায় পড়ে যায়। আশপাশের লোকজন একটা রিকশা ডেকে তুলে দেয়। দেখি প্রচুর রক্ত পড়ছে।

গাজী ভ্যারাইটিজ স্টোরের নাঈম বলেন, ‘দেখলাম ভেতর থেকে ঘাড় চেপে ধরে ইয়াসিন বের হচ্ছে। রক্ত পড়তেছিল। রাস্তায় এসে পড়ে গেল। শুনলাম হাসপাতালে নেওয়ার আগে রাস্তাতেই মারা গেছে।’

মামলা সম্পর্কে তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার এসআই ফরহাদ আলী জানান, ইয়াসিন নিহত হওয়ার ঘটনায় তার স্ত্রী চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এরমধ্যে তিনজন গ্রেফতার হয়েছে। তাদের দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। এজাহারনামীয় আসামি হারুন পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

খুনের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাওনা টাকাকে কেন্দ্র করে খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে গ্রেফতারকৃতরা। অন্য কোনো রহস্য আছে কিনা সে বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Our Like Page